বিজয় চন্দ্র দাস, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের কংশ নদ থেকে বেপরোয়াভাবে ভালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর ও আবাদী জমি। হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় ১৫ গ্রামের বিপুল পরিমাণ আবাদী জমি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জেলার কংশ নদ এক সময় খুবই খরস্রােতা ছিল। সারা বছর ওই নদে পানি থাকত, বর্ষার ভয়াল রূপ ধারণ করত। নদের পানি দক্ষিণ তীর চাপিয়ে তলিয়ে যেত ফসলী জমি। এলাকার ফসল রক্ষার জন্য গত ১৯৯২ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। এতে ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বিজয়পুর, দুর্গাশ্রম, ঠাকুরাকোনা, পাহাড়পুর, তাতিয়র, শিমুলহাটী, বাঘরুয়া, পাঁচপাই, বাংলাসহ কমপক্ষে অন্তত ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর ইরি বোরো ফসলী জমি অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায়। ওই বাঁধ সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা থেকে জেলার পূর্বধলার জারিয়া পর্যন্ত লম্বায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। এ বাঁধের উপর দিয়ে জেলা সদর থেকে ঠাকুরাকোনা হয়ে ফকিরের বাজার, পাহাড়পুর সহ ইউনিয়নের ১২-১২টি গ্রামের মানুষ সারা বছর রিকশা, অটো রিকশা, মোটর সাইকেল, সিনএনজিযোগে যাতায়াত করে থাকে।\
গত ২০১০ সালের দিকে নদের দক্ষিণ তীরে ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বাঘরুয়া, পাঁচপাই এলাকায় কংশ নদের তীরে দেখা দেয় ভাঙ্গন। এরই মধ্যে খালপাড়, বাঘরুয়া, পাঁচপাই গ্রামের অর্ধশত বাড়িঘর ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে আবাদী ও অনাবাদী অনেক জমি। এবারের বন্যায় নদীর তীর ভাঙ্গন আরও ভয়াল রূপ ধারণ করে। তার ওপর গত কয়েকদিন ধরে রাতের আধারে লোক চক্ষোর আড়ালে এল.পি হারুণ, এস.এম কাকন নামে বড় দুটি ট্রলারে ড্রেজার দিয়ে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলণ করা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসল রক্ষা বাঁধ। বাঁধ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যেতে পারে নদের তীরবর্তী মসজিদ, মন্দির, জনপদ, কবরস্থান ও লোক বসতি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকের মদদে ট্রলারে ড্রেজার বসিয়ে রাতের আধারে নদ থেকে বালু উত্তোলন করছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে মদদদাতারা তাদের হুমকি প্রদান করে আসছে। সম্প্রতি নেত্রকোনা সদর উপজেলা ভূমি অফিসে বিষয়টি অবহিত করার পর কয়েকজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই বালু উত্তোলন শরু করে বালু ব্যবসায়ীরা। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে দায়সারা বাধ রক্ষার চেষ্টা করে। যা ওই বছর বর্ষার মৌসুমে ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। ড্রেজারে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে যেকোন মূহুর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে ফসল রক্ষা বাঁধটি। বন্ধ হয়ে যেতে পারে বাঁধের উপর দিয়ে যানবাহনে যাত্রীসাধারণের যাতায়ত।
সদর উপজেলার দূর্গাশ্রম গ্রামের সমাজসেবক ইবনে হায়দার জাহান বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে আমাদের এলাকার বিশাল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বাঁধটি রক্ষার স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি। অন্যথায় প্রতিবছর বর্ষার পানি প্রবেশ করে এলাকার ফসল তলিয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে এলাকাবাসীর এ বাঁধের উপর দিয়ে যাওয়া আসা।
খালপাড় গ্রামের শিক্ষক নূরুল আমিন জানান, গত কবছরে আমাদের কয়েকজনের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে একদিকে যেমন ফসল তলিয়ে যাবে অন্যদিকে ঘরবাড়ি শূন্য হয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে হবে খোলা আকাশের নীচে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, বাঘরুয়া গ্রামের অংশে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আছে। বাঁধের কাছে নদী থেকে বালু উত্তোলন খুবই বিপদজনক। এতে যেকোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, ঠাকুরাকোনার কংশ নদের ওই অংশে কোন বালু মহাল নেই। বালু উত্তোলনের বিষয়টি তদন্ত করে অতি দ্রুত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত দিন: